লালসালুর জমিলা: পাঠের সংস্কৃতি ও পূর্ববাংলার সমাজ-পাঠের এক পর্ব

Abstract

বর্তমান প্রবন্ধে পরস্পর সম্পর্কিত দুটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাবিত হয়েছে। এক দিকে লালসালু উপন্যাসের একগুচ্ছ পাঠ পর্যালোচনা করে দেখানো হয়েছে, প্রধান পাঠ-প্রবণতা এবং এই সূত্রে জমিলা চরিত্র সম্পর্কে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোটেই টেক্সট সমর্থিত নয়। অন্য দিকে, মুখ্যত নব্য-সমালোচনা এবং গৌণত চিহ্নবিদ্যা ও ডিসকোর্স অ্যানালাইসিসের সূত্র ধরে দেখানো হয়েছে, লালসালু বাস্তববাদী উপন্যাস নয়, আর জমিলাও প্রতিবাদে ‘সক্রিয়’ চরিত্র নয়। প্রকরণ-প্রকৌশলের মতো ভাবগত স্তরেও উপন্যাসটি নিরীক্ষাধর্মী; আর সামাজিক ভাষায় জমিলার অনধিগম্যতাই চরিত্রটি নিয়ে উপন্যাসের উচ্চাভিলাষী আয়োজনের মূল ভিত্তি। এ প্রেক্ষাপটে বর্তমান প্রবন্ধে লালসালু পঠিত হয়েছে মুখ্যত ‘প্রকৃতিপ্রতিম’ জমিলাকে কেন্দ্রে রেখে; দেখানো হয়েছে, মজিদের পরাজয় আদতে প্রতীকী—লালসালুর মশহুর পাঠকগণ যেভাবে জমিলার সক্রিয় ঘৃণায় বিপর্যস্ত মজিদের কল্পনা করেছেন, সে রকম কিছু ঘটেনি। বরং জমিলার ‘নিষ্ক্রিয়’ সক্রিয়তা উপন্যাসটিকে এক বহু-সম্ভাবনাময় কাঠামোর আকার দেয়, যা একে জীবনের বহু-পাঠসম্ভব নিরীক্ষাক্ষেত্রে উন্নীত করে। টেক্সটে বিকীর্ণ চিহ্ন উদ্‌ঘাটন করে প্রবন্ধটিতে আরো দেখানো হয়েছে, লালসালুর সংখ্যাগরিষ্ঠ পাঠ আমাদের সমালোচনা-সাহিত্যের দীনতা যেমন নির্দেশ করে, তেমনি পূর্ববাংলার সমাজ-পাঠের কিছু প্রভাবশালী দৃষ্টিভঙ্গিও উন্মোচন করে।