কুমারখালীর নিরক্ষরদের ভাষা

Abstract
বাংলাদেশ আদমশুমারী (১৯৯১) অনুযায়ী কুমারখালীর জনগোষ্ঠীর সাক্ষরতার হার ২৪.৯% । এই ২৪.৯%-এর মধ্যে পুরুষ ও মহিলা উভয়ই রয়েছেন। তাহলে কুমারখালীর সিংহভাগ জনগোষ্ঠী অর্থাৎ শতকরা ৭৫.১ জন লোকই নিরক্ষর। নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর জীবনপ্রবাহ ও কর্মের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করছে সে অঞ্চলের অর্থনীতি, একথা বললে খুব একটা ভুল বলা হয় না। নিরক্ষর লোকের মুখের ভাষা ও তার ব্যবহারের দ্বারা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কুমারখালীর ভাষা ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল, তা বললেও সম্ভবত ভুল বলা হবে না। নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর ভাষা আলোচনা করতে গিয়ে এর মধ্যেকার নারী-পুরুষ ও হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়গত বাস্তবতাকে বিবেচনায় রাখা বিশেষভাবে প্রয়োজন। কুমারখালীর নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর ভাষা আলোচনা ও বিশ্লেষণের পূর্বে কুমারখালীর উপভাষাগত অবস্থা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নেওয়ার আবশ্যকতা রয়েছে। সাক্ষর ভাষা-ভাষীদের মধ্যে যেমন ভাষা প্রমিতকরণ রূপের প্রয়োগ-রীতি লক্ষ করা যায়, নিরক্ষর লোকদের ভাষা প্রয়োগরীতিতে তা অনুপস্থিত থাকে। প্রমিত ভাষার বিষয়টা কী তা আদৌ নিরক্ষর লোকেরা বোঝেন না বা জানেন না। এই না-বোঝার বা না-জানার কারণ হলো, তাঁরা স্কুলে গিয়ে লেখা-পড়া করেন নি। পাঠ্যপুস্তকের ভাষার সাথে নিরক্ষর লোকদের পরিচয় থাকে না। তবে এমন কিছু সংখ্যক নিরক্ষর লোক কুমারখালীতে আছেন যাঁরা সামাজিকভাবে বেশ মর্যাদাসম্পন্ন। তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণ করে থাকেন। এঁদের ভাষা ব্যবহার যথেষ্ট মার্জিত ও সমাজরীতির সাথে সংগতিপূর্ণ। "সমাজে বাস করতে হলে ব্যবস্থার সাথে খাপ্ খাইয়ে নিয়ে যে ভাষার ব্যবহার করা প্রয়োজন, সে-ভাষাই সামাজিক ভাষা। এর উল্টোটার নাম হল অসামাজিক ভাষা। 'অসামাজিক-ভাষা' ব্যবহার করে সমাজে বাস করা যায় না—একথা বোধ হয় না বললেও চলে। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা এমনই যে, এতে বয়সের প্রশ্ন, মান-মর্যাদার প্রশ্ন, ব্যক্তিগত সম্বন্ধের প্রশ্ন, শিক্ষা-দীক্ষা, ধর্ম-কর্ম প্রভৃতি কত কিছুর প্রশ্ন যে জড়িয়ে আছে, তার কোন সীমা নেই। সমাজের এ-সব অবস্থার কথা মেনে নিয়েই ভাষার ব্যবহার করতে হয়। নতুবা সমাজে বাস করা কঠিন। আমরা সমাজের এত সব দাবীকে সন্তুষ্ট করে যে ভাষা ব্যবহার করি তাকেই 'সামাজিক ভাষা' বলে উল্লেখ করতে পারি।”
Downloads

Downloads
Published
Issue
Section
License
Copyright (c) 2024 সাহিত্য পত্রিকা - Shahitto Potrika | University of Dhaka

This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivatives 4.0 International License.