লালন শাহ : জীবনদর্শন

Abstract
লালন শাহের জীবনদর্শনের আলোচনা সাধারণতঃ লালন-মানসে বিরাজমান প্রেক্ষাপটের আলোচনাকেই বুঝায়। অর্থাৎ তাঁর দীর্ঘজীবনকালে (১৭৭২-১৮৯০) তিনি যে-সব সংস্কৃতির অথবা ভাবধারার সংস্পর্শে এসেছেন এবং যেগুলোর প্রভাব তাঁর চিন্তাধারার উপর পতিত হয়েছে, সেগুলো সম্বন্ধেও কিছুটা আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। কারণ এ-বিশ্বের প্রায় সকল মনীষীর চিন্তাধারা নানাবিধ ভাবধারায় গঠিত, একেবারে নিরঙ্কুশ চিন্তাধারা এ-জগতে সত্যিই বিরল। তাই এ-প্রসঙ্গে আমরা ভারতীয় ইতিহাসে মুসলিমদের আগমনের পূর্বে এবং পরে যে-সব ভাবধারা বিকশিত হয়েছিল এবং যে-সব প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল, সে সম্বন্ধে আলোকপাত করা প্রয়োজনীয় মনে করি। কারণ লালনের চিন্তাধারায় বিভিন্ন মতবাদের প্রভাব বর্তমান। লালনের জীবনদর্শনের আলোচনা প্রসঙ্গে তাই সেই জীবনদর্শনের প্রেক্ষাপটে অবস্থিত ভাবধারার আলোচনা প্রয়োজন। সাধারণতঃ ধারণা করা হয় ইসলাম ধর্ম এ-দেশে বিজয়ী সুলতানদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই প্রবেশ করেছে। কিন্তু ইতিহাস আলোচনা করলে দেখা যায়, অষ্টম শতাব্দীর প্রথম দশকে মুহম্মদ বিন কাশিম কর্তৃক সিন্ধু প্রদেশ জয়ের পূর্বেও ভারতের পশ্চিম উপকূলে শিয়া মিশনারীগণ ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছেন। অপর দিকে অন্য একটা ধারণা হচ্ছে এই, ইসলাম ধর্মের অন্তর্গত শরীয়তের আইন-কানুন পূর্ণাঙ্গভাবে এ-দেশে এসে উপস্থিত হয়েছে। অথচ ইতিহাসের আলোচনা করলে দেখা যায়, ইমাম আবু হানিফা এবং অন্যান্য ইমাম কর্তৃক শরীয়তের আইন-কানুন সুসমবদ্ধভাবে প্রকাশ করার পূর্বে এদেশে ইসলাম ধর্ম প্রবেশ করেছে। খ্রীস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে বাগদাদের খলিফা মনসুরের শাসনকালে (৭৫৪-৭৭৫) ইমাম আবু হানিফা কর্তৃক শরীয়তের বিধানগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হওয়ার পরে হানাফী মাজহাবের সৃষ্টি হয়। তার ফলে শরীয়তের বিধানগুলে৷ পাকা-পোক্তভাবে পৃথিবীর সর্বত্র প্রকাশিত হয় তেমনি অন্যান্য মাজহাবের ইমামগণের দ্বারাও যেসব মাজহাবের সৃষ্টি হয়েছে, যেগুলো এ-বিশ্বের সর্বত্র প্রকাশিত
হতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়। ভারতের বুকে বিভিন্নদলে যেসব মুসলিম মিশনারী ও সওদাগর ইসলাম ধর্ম প্রচার করেছিলেন, তাদের সঙ্গে ইসলামী শরীয়তের পাকাপোক্ত বিধানগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে ছিল না৷ খোলাফায়ে রাশেদীনের বর্ণিত শরীয়তের বিধানগুলো তাঁরা যথাযথভাবে পালন করার চেষ্টা করেছেন বটে, তবে কোন লিখিত গ্রন্থাদি সঙ্গে না থাকায় তারা শরীয়তের কোন কোন বিশিষ্ট দিকের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। শরীয়তের মূল বক্তব্য হল, এ পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ্, যিনি সর্বশক্তিমান এবং হযরত মুহম্মদ (দঃ) তাঁর প্রেরিত রসুল। আল্লাহ্র বাণী এবং রসুলের নির্দেশের উপর আস্থা স্থাপন করে জীবন-যাপন করা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্যিক কর্তব্য। মৃত্যুর পর রোজ-কেয়ামতে মানুষের বিচার হবে, পাপীকে দোজখে এবং পুণ্যবান
ব্যক্তিকে স্থান দেওয়া হবে বেহেস্তে।
Downloads

Downloads
Published
Issue
Section
License
Copyright (c) 1983 সাহিত্য পত্রিকা - Shahitto Potrika | University of Dhaka

This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivatives 4.0 International License.