অদ্বৈত মল্লবর্মণের ছোটগল্প : প্রসঙ্গ ভাষা

Abstract
সাতচল্লিশ--পূর্ব বাংলা কথাসাহিত্যের ধারায় অদ্বৈত মল্লবর্মণ এক অনন্য নাম। স্বল্পপ্রজ এই লেখক উপন্যাসের বাইরে মাত্র চারটি ছোটগল্প লিখেছেন। ব্যক্তির অন্তর্জীবনের স্বরূপ উন্মোচনই ছিল তাঁর গল্পের মৌল অভিপ্রায়, যা অদ্বৈত মল্লবর্মণকে গভীরভাবে করে তুলেছে অন্তর্বাস্তবতার শিল্পী। চরিত্রের গভীরে সন্ধানী আলো ফেলে এই লেখক তাঁর গল্পে তুলে এনেছেন ব্যক্তির ভাবনা-বেদনা। ব্যক্তিসত্তার বহির্বাস্তবতা নির্মাণের পাশাপাশি ক্রমরূপান্তরশীল অন্তর্বাস্তবতার স্বরূপ অঙ্কনে সচেষ্ট অদ্বৈত তাঁর গল্পের ভাষাকে স্বাভাবিকভাবেই করে তুলেছেন ব্যঞ্জনাময় এবং প্রতীকধর্মী। চারটি গল্পের বিষয় বিশ্লেষণে অদ্বৈত-র ভাষাব্যবহার প্রবণতা উপলব্ধি করা যাবে। তাঁর প্রথম গল্প 'সন্তানিকা'য় এক সর্বহারা নিঃস্ব বৃদ্ধের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, তার অস্তিত্বভাবনার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, পারিবারিক আবহের উষ্ণ সাহচর্যে মৃত্যুবরণের দুর্মর আকাঙ্ক্ষা এবং মৃত্যুকেন্দ্রিক প্রগাঢ় নৈঃসঙ্গ্যচেতনা রূপায়ণে অদ্বৈত মল্লবর্মণ যথাযথ ভাষা ব্যবহারে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। শুধু ‘সন্তানিকা' নয়, “কান্না' গল্পেও গুরুদয়াল নামক এক বিপত্নীক ভবঘুরে ব্যক্তিসত্তার মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা রূপায়ণে অদ্বৈত ভাষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। একইরকমভাবে, 'বন্দী বিহঙ্গ' গল্পে কলকাতার যান্ত্রিক জীবনে বন্দী এক বিহঙ্গের মতোই সাপ্তাহিক খবরের কাগজের নিতান্তই ছাপোষা সহকারী সম্পাদক আবু মিয়ার মুক্ত প্রকৃতি আর পরিজনের সান্নিধ্যলাভের ব্যাকুলতা গীতল ভাষায় প্রতিভাসিত। এ তিনটি গল্প ছাড়াও ‘স্পর্শদোষ' গল্পের ব্রাত্যমানুষ ভজা আর পথের খেঁকী, নেড়ী কুকুরের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্কের আপাত দ্বন্দ্ব এবং গল্পশেষে ভজার প্রগাঢ় মানবিক আলিঙ্গনে মৃত নেড়ীর সঙ্গে সেই বিরোধের করুণ নিষ্পত্তি অঙ্কনে অদ্বৈত মল্লবর্মণ যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, নিঃসন্দেহে তা নান্দনিক।
