অন্তর্জলী যাত্রা-র বাক্যকাঠামো বিশ্লেষণ

Abstract
কমলকুমার মজুমদারের ঔপন্যাসিক গদ্য আধুনিক বাক্যতাত্ত্বিক গবেষণার এক আকর্ষণীয় ক্ষেত্র এই আকল্প বর্তমান প্রবন্ধের মূল প্রেরণা। উপন্যাসের গদ্য নিয়ে এই পক্ষপাতের পেছনের কৈফিয়তটি হলো, কমলকুমার যে গদ্যরীতিকে আশ্রয় করে দশের মধ্যে এগারো হয়ে রয়েছেন তার শুরুটা প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস অন্তর্জলী যাত্রা থেকেই। এর পরবর্তীকালে কমলকুমারের রচিত বিভিন্ন সৃষ্টিশীল সাহিত্যকর্মকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শাসন করেছে এই উপন্যাসটি, দিয়েছে অননুকরণীয় পথনির্দেশ। ১৩৬৯ বঙ্গাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয় অন্তর্জলী যাত্রা। এর কাছাকাছি সময়ে লেখা গল্পেও এই উপন্যাসের প্রভাব চোখে পড়ে এবং অনিবার্যভাবে সেগুলো লেখা হয় সাধুরীতিতে; অবশ্য এই সাধুরীতি অন্তর্জলী যাত্রা-র মতো ধ্রুপদী চিত্রকলাতুল্য স্থাপত্যধর্মী নয়, ছোটগল্প-প্রত্যাশিত হালকা মেজাজ এসব গল্পে স্পষ্টভাবেই লক্ষণীয়। এমনকি তাঁর অন্যান্য উপন্যাস, যেখানে তিনি অনেক বেশি নিরীক্ষা-প্রিয় সেসব রচনায় শৈল্পিক স্বাতন্ত্র্য অক্ষুণ্ণ রেখেও প্রথম উপন্যাসের সৃষ্টি-নির্দেশনা প্রচ্ছন্ন নয়। তাছাড়া, কেবল সাধুরীতি-চলতিরীতির দ্বান্দ্বিক বৈচিত্র্য তো নয়, কমলকুমারের ঔপন্যাসিক গদ্যের চলন, ব্যবহৃত বাক্যসমষ্টির অন্তর্শায়িত নান্দনিক তথ্যকাঠামো, বাক্যের গঠন ও পদবিন্যাস পরম্পরা, খণ্ডবাক্যসমষ্টির বিন্যাস প্রভৃতি বাক্যতাত্ত্বিক বিশেষত্ব এ সকল ক্ষেত্রেই অন্তর্জলী যাত্রা ব্যতিক্রমী এক শিল্পগদ্যের আকর। এই উপন্যাসে বিধৃত মানবমনস্তত্ত্ব, নির্মম সামাজিক কৌতুক, বিচিত্র চিত্রকল্পসম্ভার, অদৃষ্টপূর্ব পুরাণ-প্রসঙ্গ এবং অবশ্যই এর ভাষারীতি প্রভৃতি অনুষঙ্গ নিয়ে পৃথক পৃথক গবেষণা সম্ভব। তবে, বর্তমান আলোচনা উপন্যাসটির সংলাপ-বহির্ভূত বাক্যসৃষ্টির বিশেষত্ব নিরূপণের মধ্যেই সীমিত থাকবে।
