গ্রন্থ পরিচয় : আলী আনোয়ারের সাহিত্য-সংস্কৃতি নানা ভাবনা

Abstract
কাচার অ্যান্ড অ্যনাকি গ্রন্থে ম্যাথু আর্নল্ড (১৮২২-১৮৮৮) সংস্কৃতি সম্পর্কে যে কথাটি বলেছেন তা এরকম: 'কাচার বা সংস্কৃতি শ্রেণি ও সম্প্রদায়গত ব্যবধান দূর করে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান ও চিন্তাকে সকলের মধ্যে বিলিয়ে দিতে চায়, সকলকে রাখতে চায় মাধুর্য ও আলোকের প্রতিবেশে, যেখানে তারা অবাধে ঐ সবের ব্যবহার করতে পারে।... সংস্কৃতিমান্ লোকেরাই প্রকৃতি সাম্যের বাহক।' অধ্যাপক আলী আনোয়ার (১৯৩৫- ২০১৪)-র ব্যক্তিমানস বা চিন্তন-কাঠামো যদি ওইরূপ অর্থানুগ বলি তবে তা মেনে নেওয়া চলে সাহিত্য-সংস্কৃতি নানা ভাবনার ভূমিকা-পাঠ থেকে। ভূমিকায় সনৎকুমার সাহা লিখেছেন: 'চূড়ান্ত বিচারে তিনি দেখেন রাষ্ট্র ও মানবসমাজে বিপরীতার্থক সম্পর্ক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের ক্ষমতার বিকাশ ঘটিয়ে তাকে আকাশস্পর্শী করেছে । সেই ক্ষমতা কুক্ষিগত রাষ্ট্রের হাতে। রাষ্ট্র কবন্ধ। তার চোখ নেই, মুখ নেই, বোধ নেই । নৈর্ব্যক্তিক লোলুপতায় ধ্বংস করে তা মানুষের যা কিছু ব্যক্তিগত, যা কিছু স্বপ্নময়, যা কিছু সৌহার্দ্যের।... এই উত্তর-আধুনিক উত্তর-ঔপনিবেশিক ভাবনা-বিশ্ব আলী আনোয়ারকে কিছুটা হলেও মুগ্ধ করেছে, মনে হয়। তবে তাঁর সদিচ্ছা নিখাদ; এবং উদ্বেগ অকারণ নয়। তা যথেষ্ট বাস্তব । এ মর্মে তুলে নিলে তাঁর গ্রন্থটিতে নানা বিষয় ও উপলক্ষে মিলবে মোট ২৪টি প্রবন্ধ। গ্রন্থটির কলেবর বিস্তৃত হয়েছে কিছু দীর্ঘায়ত প্রবন্ধের কারণে। প্রসঙ্গত, আলী আনোয়ারকে দুটো কাজে একটু আলাদা করে স্বীকার করার ব্যাপার আছে- এক. ১৯৭০-এ বিদ্যাসাগরের সার্ধশত জন্মবার্ষিক স্মারকগ্রন্থ প্রণয়নের নির্ণায়করূপে, দুই. ধর্মনিরপক্ষেতা (১৯৭৩) সংকলনের সম্পাদকরূপে। দুটো কাজই তখনকার বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রারম্ভিকপর্বের প্রতিকূল পরিস্থিতির চিরপ্রাসঙ্গিক অনুষঙ্গ, বিশেষ করে আজকেও আমাদের জন্যে এর প্রয়োজন কিছুমাত্র ফুরিয়েছে বলে মনে হয় না।
