বাংলা শব্দ ও অক্ষর ভাগ (Word delimitation & Syllabification in Bengali)

Abstract
ভাষার দুটো রূপ। একটা তার লেখ্যরূপ, অন্যটা শ্রুত। লেখ্যরূপ দৃশ্যরূপের নামান্তর। এটিকে eye অথবা hand language বলা যায়। আর শ্রুত রূপটিকে ear language এর পর্যায়ভুক্ত করা যেতে পারে। মানুষের হৃদয়ানুভূতির আধার কিংবা ব্যবহার জীবনের বাহন হিসেবে ভাষা মানুষের মুখে কথা হয়ে ফুটে উঠলে দেখা যায় মানুষ বিচ্ছিন্ন ধ্বনি কিংবা শব্দ উচ্চারণ করেনা; উচ্চারণ করে ছোট বড়ো অগণিত বাক্য। এক একটি ছোট শব্দও স্থানবিশেষে জীবন্তহৃদয়ের ছোয়া পেয়ে এক একটি বাক্যে পরিণত হতে পারে। বাক্য ছোট হোক কিংবা বড়ো হোক তার অন্তর্নিহিত যে ধ্বনি সমন্বয়ে তা গড়ে ওঠে মানুষের মুখ দিয়ে তা নির্গত হ'তে গেলেই সেখানে অবিরল ধ্বনিস্রোতের সৃষ্টি হয়। প্রতিবিম্বিত করতে গেলে এক একটি তা করা যায় না। কয়েকটি হরফের সাহায্যে এক একটি শব্দের রেখাচিত্র নির্মাণ করা হয় এবং হাতের লেখা কি ছাপার হরফে মুখের ভাষাকে এ ভাবে চিত্রায়িত করতে হলে প্রতিটি ধ্বনিসমন্বিত এক একটি হরফের পরে না হোক অন্তত প্রত্যেকটি শব্দের পরে দুই শব্দের মাঝখানে একটু ফাঁক (inter word space) রাখা হয়। কিন্তু লেখা পড়তে কি বক্তৃতা করতে গিয়ে, কিংবা সেগুলোকে হরফের সাহায্যে হরফ পৃথক পৃথক ভাবে দাড় করিয়ে কবিতা আবৃত্তি কি ভাবায়ুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে কিংবা ব্যবহারিক জীবনের প্রয়োজনে ভাষা ব্যবহার করতে গিয়ে মানুষ যখন কথা বলতে শুরু করে তখন দুই শব্দের মাঝখানে কোথাও ফাঁক দেখা যায়না। একটা মনোভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ না ক'রে কিংবা একটি প্রয়োজন না মিটিয়ে সে থামেনা। সেজন্যে একটি গোটাবাক্য (কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে বাক্যাংশও) ভাষার এক একটি ইউনিট হয়ে দাঁড়ায়। সেদিক থেকে বাক্যই ভাষার বৃহত্তম ইউনিট আর একটি তাক্ষর (syllable) নিম্নতম ইউনিট। বাংলা ধ্বনির প্রকৃতি অনুসারে হয় একটি স্বরধ্বনি কিংবা স্বরধ্বনি সমন্বিত ব্যঞ্জনধ্বনিই এক নিঃশ্বাসের স্বল্পতম প্রয়াসে উচ্চারিত হয় দেখে (যেমন অ, ক, কি, যা ইত্যাদি) একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ স্বরধ্বনি কিংবা একটি স্বরসংশ্লিষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনিই ভাষার নিম্নতম ইউনিট গঠন করে। ভাষার এ নিম্নতম ইউনিটই ধ্বনিতাত্ত্বিক পরিভাষায় syllable বা অক্ষর হিসেবে পরিগণিত হয়। বাক্য এবং অক্ষরের মাঝখানের ইউনিটই এক একটি শব্দ। কতকগুলো ধ্বনি সমন্বয়ে মনের ভাব পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারলে তা হয় বাক্য। ধ্বনি প্রবাহে যেখানে মনোভাব পূর্ণতা লাভ করে কিংবা ব্যবহারিক জীবনের প্রয়োজন অংশতও মেটানো যায় সেখানেই নিঃশ্বাসের বিরাম বা যতি পড়ে। এ ভাবে সার্থ এবং শ্বাসপর্ব হয় পৃথকভাবে না হয় একত্রে বাক্য কিংবা বাক্যাংশ গড়ে তোলে। এ ধ্বনি প্রবাহ থেকে শব্দ এবং অক্ষরকে কি ভাবে পৃথক করা যায়, সেটিই বড়ো প্রশ্ন।
Downloads

Downloads
Published
Issue
Section
License
Copyright (c) 1959 সাহিত্য পত্রিকা - Shahitto Potrika | University of Dhaka

This work is licensed under a Creative Commons Attribution-NonCommercial-NoDerivatives 4.0 International License.